Header Ads

Header ADS

স্কাউটিং করে কী পেয়েছি

স্কাউট একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই স্কাউট আন্দোলন চালু আছে। বাংলাদেশে স্কাউটের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। দেশের প্রায় সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই এর কার্যক্রম চলছে। এই সংগঠন একজন মানুষকে কী দেয়, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ড পাওয়া সিদ্ধার্থ মজুমদার

দ্বিতীয় এলিজাবেথ মাত্র ২৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের রানি হয়ে বসেছিলেন। তাঁর সিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর পূর্ণ হয় ২০১২ সালে। গোটা ইংল্যান্ডে বছরজুড়ে তখন হীরকজয়ন্তীর উৎসব।

 কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর তরুণদের উৎসবের অংশীদার করতে তারা আমন্ত্রণপত্র পাঠাল। শর্ত জুড়ে দিল, পাঠাতে হবে দেশগুলোর তরুণ স্কাউটদের মধ্যে সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ডধারীদের।

 কমনওয়েলথের প্রতিটি দেশ থেকে দুজন করে প্রতিনিধি যোগ দেবেন এই উৎসবে। কঠিন বাছাইপর্ব শেষে বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে মনোনীত হয়ে দেশের প্রতিনিধি হয়ে পাড়ি দিলাম ইংল্যান্ডে। রানি দর্শনের জন্য নির্দিষ্ট দিনে ঐতিহ্যবাহী উইন্ডসর প্রাসাদে আমাদের নিয়ে আসা হলো। প্রচণ্ড শীত তখন। শীতে, উত্তেজনায় একটু একটু করে কাঁপছি। রাজকীয় বাদক দল তাদের যন্ত্রে সুর তুলল। পাথরের প্রাসাদে ধ্বনিত হতে থাকল সেই সুর। একেকটা দেশের নাম ঘোষণা হতে থাকল। স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলাদেশের নাম শুনলাম। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক শক্তির বান ডেকে গেল। মাথা উঁচু করে এগিয়ে গেলাম রানির দিকে। একটা সুযোগ আরেকটা সুযোগ এনে দেয়। লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী মালবরো হাউসে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে আমরা বৈঠক করলাম। বিশ্বনেতারা যে বৈঠকখানায় বসেন, ঠিক সেখানেই। বাংলাদেশের জন্য যে সংরক্ষিত আসন থাকে, সেখানেই আমার আসন!

 ইংল্যান্ডের পত্রিকাগুলোতে নিজেদের খবর ছাপা হতে দেখলাম। কী ভীষণ রোমাঞ্চকর সেই সব দিন! আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি, তখন স্কাউট দলে যোগ দিই। প্রাথমিক স্কুলের শেষ দিকে পেয়ে যাই কাবিংয়ের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি—শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড। এই অ্যাওয়ার্ড দেশের প্রধানমন্ত্রী দিয়ে থাকেন। গণভবনে যাওয়ার আমন্ত্রণ আসে। পরিবারের একজনকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। আমি বাবার হাত ধরেই যাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অ্যাওয়ার্ড পরিয়ে দেন। সেদিন বাবা খুব গর্বিত হয়েছিলেন। তাঁর পরিচিত লোকদের ডেকে ডেকে বলতে শুনেছি আমার কথা। আজকে আমি গর্বিত, বাবাকে সঙ্গে নিতে পেরেছিলাম বলে। তারপর দীর্ঘ সিলেবাস সম্পন্ন করে লিখিত, মৌখিক, নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উতরে আমি প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হই। এই অ্যাওয়ার্ডটা দেওয়া হয় বঙ্গভবনে, প্রেসিডেন্ট নিজের হাতে পরিয়ে দেন। বঙ্গভবনে এই অ্যাওয়ার্ড আমি খানিকটা মন খারাপ করেই নিই। কারণ, বঙ্গভবনে পরিবারের কাউকে নেওয়ার সুযোগ ছিল না।

 গণভবনে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম বঙ্গভবনে মাকে নিয়ে যাব। স্কাউটিংয়ে ক্যাম্পিং সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। একবার সিরাজগঞ্জের ধু ধু বালুচরে ক্যাম্প বসল। ভরা শীতকাল। সন্ধ্যা উতরে আকাশে তখন ঘোলাটে চাঁদ। কুয়াশায় বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে আছে। ফিল্ড বুক আর কম্পাস দেখে দেখে মরুভূমির মতো বালুচর ধরে আমরা এগোই। দূরে হারিকেনের আলো জ্বেলে আলাদা আলাদা রাস্তা ধরে অন্য স্কাউট দলগুলোও এগিয়ে যায়। এমন রোমাঞ্চকর হাইকিং স্কাউটদের প্রতিটি ক্যাম্পেই হয়।

 ক্যাম্পে স্কাউটদের রান্না করে খেতে হয়, সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী হতে হয়, সাহসী হতে হয়। একেকটা ক্যাম্প শেষে নিজের অজান্তেই মানসিক বয়সটা বেড়ে যায় অনেক। বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনিই প্রথম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কাছে যখন জানতে চাই স্কাউটিং এর অভিজ্ঞতা একজন মানুষকে কী দেয়? তিনি বললেন, ‘একজন স্কাউট সব সময় অন্যের থেকে এক কদম এগিয়ে থাকে। স্কাউটিং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এবং দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।’ সফল মানুষ হতে স্কাউটিং কতটা জরুরি সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্কাউটিং পরিকল্পিতভাবে কাজ করা শেখায়। যেকোনো কাজই ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেয় স্কাউটরা, এটাকে স্কাউটিংয়ের ভাষায় বলে পেট্রল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কাজ করলে, জীবনের সব ক্ষেত্রেই সফল হওয়া যায়।’

 স্কাউটিংয়ের প্রতিষ্ঠাতার নাম রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল। তিনি মাত্র ২০ জন সদস্য নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্রাউন্সি দ্বীপে স্বেচ্ছাসেবার এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তারপর ইউরোপ আমেরিকা হয়ে সমগ্র বিশ্বে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এখন সমগ্র বিশ্বে ৩ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ স্কাউট আন্দোলনে যুক্ত। বাংলাদেশে এই সংখ্যা এখন প্রায় ১৫ লাখ। আমি বাংলাদেশের একজন স্কাউট হিসেবে সত্যিই গর্বিত।

কোন মন্তব্য নেই

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.